বরগুনা প্রতিনিধি ॥ বরগুনার আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরা পারভীন রবিবার বিকেলে আমতলী থানায় একজন আইনজীবী ও তার সহকারীর বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধা ও হত্যা চেষ্টার মামলা দায়ের করেছেন। গ্রেপ্তারকৃত আইনজীবীর নাম অ্যাড. আরিফ উল হাসান (৩৩)। তিনি বরগুনা জেলা পরিষদের নির্বাচিত সদস্য এবং আমতলী পৌর যুবলীগের সভাপতি। ওদিকে আরিফ উল হাসানকে আটক করে নিয়ে যাওয়ার সময়ে তাকে জানোয়ারের বাচ্চা বলে গালি দিতে দিতে নিয়ে যান ইউএনও-এমন একটি ভিডিও স্যোসাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। তবে জানোয়ারের বাচ্চা বলার বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি মনিরা পরভীন। গ্রেপ্তারকৃত অপর আসামির নাম রায়হান (২২)। তিনি অ্যাড. আরিফ উল হাসানের সহকারী। এছাড়াও এ মামলায় সুন্দরবন-০৭ লঞ্চের সুপারভাইজার মো. মইনুলসহ (৪২) অজ্ঞাত আরো ১২ জনকে আসামি করা হয়েছে। আমতলী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার সৈয়দ রবিউল ইসলাম জানিয়েছেন, রবিবার বিকেল ৫টার দিকে মামলা গ্রহণ করা হয়েছে এবং এরপরই গ্রেপ্তারকৃত দুজনকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। এদিকে এ মামলাকে ‘ষড়যন্ত্রমূলক ও রাজনৈতিক প্রভাবিত’ মামলা বলে উল্লেখ করে অ্যাড. আরিফ উল হাসানের মুক্তির দাবিতে মিছিল করেছে স্থানীয়-ছাত্রলীগ-যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের একটি অংশ। এছাড়াও জেলা যুবলীগসহ ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান’ সংগঠনের ব্যানারে আরিফুল হাসানের মুক্তির দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। এ ঘটনায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বিভিন্ন পেশাজীবী নেতৃবৃন্দও।
এ বিষয়ে জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আ্যাড. মাহবুবুল বারী আসলাম বলেন, ‘অ্যাড. আরিফুল হাসান সম্পূর্ণ নির্দোষ। স্থানীয় রাজনীতির একটি পক্ষের চক্রান্তের শিকার সে। ওইদিনের ঘটনার যে ভিডিও চিত্র আমরা দেখেছি তাতে অ্যাড. আরিফের কোনো ত্রুটি আমরা দেখিনি। বরং ইউএনও মনিরা পারভীন তাকে অশালীন গালিগালাজসহ মারমুখী অবস্থায় ছিলেন। এটি ক্ষমতার অপব্যবহার ছাড়া আর কিছুই নয়।’ এ বিষয়ে অ্যাড. আরিফ উল হাসানের বাবা আমতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার অ্যাড, এমএ কাদের মিয়া জানান, তাঁর ছেলে নির্দোষ। তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মিথ্যে মামলা দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, তার ছেলে অ্যাড. আরিফ উল হাসান তাঁর এক বন্ধুকে শনিবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে আমতলী লঞ্চে এগিয়ে দিতে গেলে ইউএনওর সঙ্গে দেখা হয়। এসময় সে ইউএনওকে ছালাম দেয়। ইউএনও ছালাম না নিয়ে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে মানববন্ধন করো?’ এক পর্যায়ে আরিফ উল হাসানকে অশালীন গালিগালাজ করেন ইউএনও মনিরা পারভীন। এ নিয়ে বাকবিতন্ডা হলে ইউএনও তাকে পুলিশে সোপর্দ করেন।
অ্যাড. এম এ কাদের মিয়া আরো বলেন, ‘আমরা ন্যায় বিচারের জন্য যাদের কাছে যাবো তারাই যদি এমন প্রভাবিত হয়ে মিথ্যে মামলা করেন তখন আমাদের আর যাওয়ার কোনো জায়গা থাকে না।’
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরা পারভীন জানান, শনিবার দুপুর দেড়টার দিকে সাধারণ যাত্রীদের মাঝে মাস্ক বিতরণের পাশাপাশি লঞ্চে যাতে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন না হয় সে বিষয়ে সরকারি দায়িত্ব পালন করতে আমতলী লঞ্চঘাটে যান ইউএনও মনিরা পারভীন। এসময় তিনি আমতলী থেকে ঢাকাগামী সুন্দরবন-০৭ লঞ্চে ধারণ ক্ষমতার চারগুণ বেশি যাত্রী বোঝাই দেখতে পান। সঙ্গে সঙ্গে তিনি আর কোনো যাত্রী লঞ্চে না উঠিয়ে লঞ্চ ছেড়ে দেওয়ার জন্য লঞ্চের সুপারভাইজার মো. মইনুলকে নির্দেশ দেন।
সুপারভাইজার মইনুল তাঁর নির্দেশ অমান্য করে লঞ্চে যাত্রী ওঠাতে থাকেন এবং কেবিনের যাত্রী রয়ে গেছে বলে অপেক্ষা করতে থাকেন। এসময় ইউএনও মনিরা পারভীন পুনরায় সুপারভাইজার মো. মইনুলকে লঞ্চ ছাড়ার কথা বললে ইউএনও মনিরা পারভিনের সঙ্গে তিনি অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন এবং তাঁর নির্দেশ অমান্য করেন। পরবর্তীতে তাঁর সঙ্গে যোগ দিয়ে আমতলীর আইনজীবী ও জেলা পরিষদের নির্বাচিত সদস্য অ্যাড. আরিফ উল হাসান এবং তাঁর সহকারী মো. রায়হান তাঁর পাশে থাকা একটি টেবিল ভেঙ্গে ফেলেন এবং ইউএনও মনিরা পারভিনকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। এতে তিনি পায়ে এবং কোমরে আঘাতপ্রাপ্ত হন। এসময় আমতলী থানা পুলিশকে খবর দিলে আমতলী থানার পুলিশ ওই সময়েই আইনজীবী আরিফ উল হাসান এবং তাঁর সহকারী মো. রায়হানকে আটক করে থানায় নিয়ে যান। বরগুনার জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ বলেন, ‘আমি জেনেছি আমতলীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সরকারি কাজে বাধা দেওয়া হয়েছে, তার সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করা হয়েছে এবং তাকে আহত করা হয়েছে। এ ঘটনায় আমতলীর ইউএনও মনিরা পারভীন ব্যক্তিগতভাবে আমতলী থানায় মামলা দায়ের করেছেন। একজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটে থাকলে তা অপরাধ। বিষয়টি আমরাও খতিয়ে দেখছি।’
Leave a Reply